সাহিত্যদর্পণ
সাহিত্যদর্পণ (প্রথম পরিচ্ছেদ) Part - 2
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
Ø “বাক্যং রসাত্মকং কাব্যম্” – এই কাব্য লক্ষণে রসযুক্ত বাক্যকে কাব্য বলা হয়েছে। তাই এই পরিচ্ছেদে বাক্যসম্বন্ধী বিচার প্রস্তুত করা হয়েছে।
Ø বাক্য ও মহাবাক্য ভেদে বাক্য ২ প্রকার।
Ø যোগ্যতা-আকাঙ্ক্ষা-আসত্তিযুক্ত পদসমষ্টিকে বাক্য বলে (বাক্যং স্যাদ্ যোগ্যতাকাঙ্ক্ষাসত্তিযুক্তঃ পদোচ্চয়ঃ)। যথা– শূন্যং বাসগৃহম্ ইত্যাদি শ্লোক।
Ø আর বাক্যসমষ্টি হল মহাবাক্য (বাক্যোচ্চয়ো মহাবাক্যম্)। যথা – সমগ্ররামায়ণ।
Ø পদের অর্থগুলির পরস্পর সম্বন্ধে বাধার অভাবকে যোগ্যতা বলে (যোগ্যতা পদার্থানাং পরস্পরসম্বন্ধে বাধাভাবঃ)। যথা – জলেন সিঞ্চতি। সেচনকরার ক্ষমতা জলের থাকায় পরস্পর সম্বন্ধে বাধা নেই তাই এখানে যোগ্যতা আছে। তাই এটি বাক্য। কিন্তু অগ্নিনা সিঞ্চতি এটি বাক্য নয়। কারণ সেচন করার ক্ষমতা অগ্নির নেই, তাই সেচন এবং অগ্নির পরস্পর সম্বন্ধ হয় না।
Ø পদের অর্থবোধের সমাপ্তির অভাবকে আকাঙ্ক্ষা বলে (আকাঙ্ক্ষা প্রতীতিপর্যবসানবিরহঃ)। যথা – রামঃ গচ্ছতি। এখানে গচ্ছতি বললে কঃ গচ্ছতি এইরূপ জিজ্ঞাসা উৎপন্ন হয়, তার নিরসন রামঃ এই পদের দ্বারা হয়, রামঃ বললে কিং করোতি জিজ্ঞাসা হয়, তার নিরসন গচ্ছতি পদের দ্বারা হয়। তাই এখানে পদগুলি পরস্পর সাকাঙ্ক্ষ হওয়ায় এটি বাক্য। যেখানে পদগুলি নিরাকাঙ্ক্ষ সেখানে সেই পদসমষ্টিকে বাক্য বলা হয় না। যথা – গৌরশ্বঃ পুরুষো হস্তী। এখানে পদসমষ্টি আছে কিন্তু সেগুলি একে অপরের প্রতি সাকাঙ্ক্ষ নয় তাই এটি বাক্য নয়।
Ø জ্ঞানের নিরবচ্ছিন্নতা হল আসত্তি (আসত্তির্বুদ্ধ্যবিচ্ছেদঃ)। যথা – দেবদত্তঃ গচ্ছতি এটি নিরন্তর উচ্চারণ করলে অর্থের বোধ হয় জ্ঞানের বিচ্ছেদ হয় না তাই এটি বাক্য। কিন্তু আজ সকালে দেবদত্তঃ বলে পরের দিন সকালে গচ্ছতি বললে জ্ঞানের বিচ্ছেদ হয়, তাই এটি বাক্য নয়।
Ø প্রয়োগার্হ অর্থাৎ প্রয়োগের যোগ্য, অনন্বিত, একার্থবোধক বর্ণ অথবা বর্ণসমূহকে পদ বলে (বর্ণাঃ পদং প্রয়োগার্হানন্বিতৈকার্থবোধকাঃ)। যথা – ঘটঃ।
Ø অভিধা, লক্ষণা ও ব্যঞ্জনা ভেদে শক্তি/বৃত্তি ৩ প্রকার।
Ø বাচক, লাক্ষণিক/লক্ষক ও ব্যঞ্জক ভেদে শব্দ ৩ প্রকার। যে শব্দ অভিধার দ্বারা অর্থ প্রতিপাদন করে তাকে বাচক বলে, যে শব্দ লক্ষণার দ্বারা অর্থ প্রতিপাদন করে তাকে লাক্ষণিক/লক্ষক শব্দ বলে, যে শব্দ ব্যঞ্জনার দ্বারা অর্থ প্রতিপাদন করে তাকে ব্যঞ্জক শব্দ বলে।
Ø বাচ্য, লক্ষ্য ও ব্যঙ্গ্য ভেদে অর্থ ৩ প্রকার। অভিধার দ্বারা প্রতিপাদিত অর্থ বাচ্য, লক্ষণার দ্বারা প্রতিপাদিত অর্থ লক্ষ্য ও ব্যঞ্জনার দ্বারা প্রতিপাদিত অর্থ ব্যঙ্গ্য।
অভিধা
Ø সংকেতিত = মুখ্য = প্রসিদ্ধ অর্থের বোধিকা হল অভিধা (সংকেতিতার্থস্য বোধনাদগ্রিমাভিধা)। আমরা লোকব্যবহার, ব্যাকরণ, কোশ, আপ্তবাক্য প্রভৃতি থেকে শব্দের যে অর্থ জানি তা হল প্রসিদ্ধ অথবা মুখ্য অথবা সংকেতিত অর্থ। সেই অর্থ যে শক্তির দ্বারা বুঝি তাকে অভিধা বলে। যথা– উত্তমবৃদ্ধ মধ্যমবৃদ্ধকে অশ্বম্ আনয় বললে মধ্যম বৃদ্ধ ঘোড়াকে নিয়ে আসে, অশ্বং বধান বললে ঘোড়াকে বাঁধে তার থেকে সেখানে উপস্থিত বালক অশ্ব>ঘোড়া এটি বোঝে। তারপর গাম্ আনয় বললে মধ্যমবৃদ্ধ গোরু নিয়ে আসে তার থেকে বালক বোঝে আনয়>আনয়ন করা অর্থাৎ নিয়ে আসা।
Ø অভিধা দ্বারা শব্দ থেকে যে অর্থ বোধ হয়, তা ৪ প্রকার– জাতি, গুণ, ক্রিয়া এবং দ্রব্য (যদৃচ্ছা)। যথা– গোশব্দ গোত্বজাতি, শুক্লশব্দ শুক্লগুণ, পাক, যাগ প্রভৃতি ক্রিয়া, হরি, হর প্রভৃতি একদ্রব্য বা সংজ্ঞাকে বোঝায়।
********
No comments:
Post a Comment