সাহিত্যদর্পণ (প্রথম পরিচ্ছেদ) Part - 2
- মম্মট রচিত কাব্যপ্রকাশের কাব্যলক্ষণটির খণ্ডন করেছেন বিশ্বনাথ। মম্মটের লক্ষণটি হল– তদদোষৌ শব্দার্থৌ সগুণাবনলংকৃতী পুনঃ ক্বাপি (দোষশূন্য, গুণবান, অলঙ্কৃত অথবা অনলঙ্কৃত শব্দ এবং অর্থ হল কাব্য)
- নির্দোষ শব্দ এবং অর্থকেই কাব্য বলা হবে, দোষ থাকলে কাব্য হবে না এই মতটি খণ্ডন করে বলেছেন মনুষ্য রচিত কাব্য একেবারেই নির্দোষ হবে এটা নিতান্তই অসম্ভব, তার ফলে মনুষ্য রচিত সাহিত্যকে কখনই কাব্য বলা যাবে না। ন্যক্কারে হ্যয়মেব... ইত্যাদি শ্লোকে বিধেয়াবিমর্শদোষ আছে। বিধেয়স্য প্রধানস্য অপ্রধানতয়া নির্দেশঃ বিধেয়াবিমর্শঃ, মুখ্যকে গৌণরূপে নির্দেশ করলে বিধেয়াবিমর্শ দোষ হয়। অদোষ শব্দের ঈষদ্দোষ অর্থ স্বীকার করলে নির্দোষ কাব্যতে ঈষদ্দোষ না থাকায় তাকে কাব্য বলা যাবে না।
- গুণযুক্ত শব্দ এবং অর্থকে কাব্য বলা হয় এই মতটিও অসঙ্গত। গুণ একমাত্র রসের ধর্ম তাই গুণবান্ রস এরকম বলা যায়, গুণবান্ শব্দ অথবা গুণবান্ অর্থ বলা যায় না। যেমন যার ধন আছে তাকেই ধনবান বলা হয়, নির্ধনিককে ধনবান বলা যায় না।
- কাব্যের শব্দ এবং অর্থ শরীর, রস হল আত্মা, মাধুর্যাদিগুণ শৌর্যের মত, কাব্যদোষ হল কাণত্বাদিদোষের তুল্য, রীতি হল অবয়বসংস্থানবিশেষের মত এবং অলঙ্কার হল কটককুণ্ডলাদিসদৃশ
- এর দ্বারা বোঝা যায় যে কাব্যের আত্মা রস থাকলেই তাকে কাব্য বলা হবে অন্যথা নয়। যেমন শরীরে আত্মা থাকলেই তাকে মানুষ বলে, অন্যথা নয় (শব বলা হয়)। গুণ, অলঙ্কার, রীতি এগুলি কাব্যের উৎকর্ষতা বিধান করে, কিন্তু কাব্য কিংবা অকাব্য তার নির্ণায়ক হয় না। তাই লক্ষণে গুণ, অলঙ্কার এগুলির উল্লেখ করা বৃথা। তাই মম্মটের গুণযুক্ত, অলঙ্কার মণ্ডিত শব্দ ও অর্থকে কাব্য বলে এই লক্ষণ দুষ্ট।
- এর ফলে বক্রোক্তিঃ কাব্যজীবিতম্ অর্থাৎ বক্রোক্তিই কাব্যের প্রাণ একথার প্রবক্তা বক্রোক্তিজীবিতকার কুন্তকের মত খণ্ডিত হয়। যেহেতু বক্রোক্তি হল অলঙ্কার বিশেষ, সে কাব্যের আত্মা হতে পারে না, উৎকর্ষমাত্রের বৃদ্ধি করে।
- মম্মট “যঃ কৌমারহরঃ...” ইত্যাদি শ্লোকে অস্ফুট অলঙ্কার আছে বলে মনে করেন। বিশ্বনাথ তার খণ্ডন করে বললেন যে এখানে সন্দেহসঙ্করালঙ্কার স্ফুট।
- “অদোষং গুণবৎ কাব্যম্...” ইত্যাদি ভোজদেব প্রণীত সরস্বতীকণ্ঠাভরণের মতও দুষ্ট
- বস্তুধ্বনি, অলঙ্কারধ্বনি ও রসধ্বনি ভেদে ধ্বনি তিন প্রকার। এদের মধ্যে রসধ্বনিই হল কাব্যের আত্মা।
- বামন কথিত “রীতিরাত্মা কাব্যস্য” মতটিও দুষ্ট
- বিশ্বনাথ ধ্বনিকার আনন্দবর্ধনকেও খণ্ডন করেছেন।
- বিশ্বনাথ সম্মত কাব্যলক্ষণ হল– “বাক্যং রসাত্মকং কাব্যম্”।
- রসের ব্যুৎপত্তি হল– রস্যতে ইতি রসঃ। কাব্যলক্ষণে রসশব্দের দ্বারা ভাব, রসাভাস, ভাবাভাস, ভাবশান্তি, ভাবোদয়, ভাবসন্ধি, ভাবশবলতারও গ্রহণ হয়।
- প্রথম পরিচ্ছেদে রস, ভাব এবং রসাভাসের উদাহরণ দেখানো হয়েছে।
- “শূন্যং বাসগৃহং বিলোক্য...” ইত্যাদি রসের উদাহরণ। এখানে সম্ভোগশৃঙ্গার হল রস।
- “যস্যালীয়ত শল্কসীম্নি...” ইত্যাদি ভাবের উদাহরণ। এখানে ভগবদ্বিষয়িণী রতি হল ভাব।
- “মধু দ্বিরেফঃ...” ইত্যাদি রসাভাসের উদাহরণ। এখানে সম্ভোগশৃঙ্গার মনুষ্যভিন্ন পশুর দেখানে হয়েছে তাই তা রস না হয়ে রসাভাস হয়েছে।
- রসের অপকর্ষ কাব্যে যে করে তাকে কাব্যদোষ বলা হয়। বিশেষভাবে সপ্তমপরিচ্ছেদে বলা হবে।
- রসের উৎকর্ষ সাধন যে করে তাকে কাব্যগুণ বলে। বিশেষভাবে অষ্টমপরিচ্ছেদে বলা হবে।
No comments:
Post a Comment