অব্যয়ীভাব
সম্-পূর্বক অস্-ধাতুর সঙ্গে ঘঞ্ প্রত্যয় যোগে সমাসশব্দটি
নিষ্পন্ন হয়। সমসনং সমাসঃ। অর্থাৎ সংক্ষেপকেই সমাস বলে। নিষ্কর্ষরূপে বলা যায় যে
অনেকপদের একপদীকরণকেই সমাস বলে। যথা পীতম্ অম্বরং যস্য – এই তিনটি পদের একপদীকরণ
হল পীতাম্বরঃ। এখানে তিনটি পদের স্থানে একটি পদের প্রয়োগই যথেষ্ট তাই সংক্ষেপ
স্পষ্ট, তাই একে সমাস বলে। এই সমাস ৪ প্রকার। যথা – ১. অব্যয়ীভাব ২. তৎপুরুষ ৩.
বহুব্রীহি ৪. দ্বন্দ্ব। কেউ কেউ কেবলসমাসকে আরও একটি প্রকার ধরে পাঁচ প্রকারও বলে
থাকেন। কর্মধারয় এবং দ্বিগু পৃথক্ সমাস নয়, তৎপুরুষেরই অবান্তর ভেদ। নিম্নে
অব্যয়ীভাব সমাসের বিস্তারিত আলোচনা প্রস্তুত করা হল –
পূর্বপদার্থপ্রধানঃ অব্যয়ীভাবঃ অর্থাৎ যে সমাসে
পূর্ব পদের অর্থ প্রধান হয় অর্থাৎ ক্রিয়ার সাথে অন্বিত হয় তাকে অব্যয়ীভাব সমাস
বলে। যথা – সুমদ্রং পশ্য। সুমদ্র কথার অর্থ হল মদ্রদের সমৃদ্ধি। তাই বাক্যের অর্থ
হল মদ্রদের সমৃদ্ধি দেখ। এখানে দর্শন ক্রিয়ার সঙ্গে সমৃদ্ধির অন্বয় হয়েছে তাই
সমৃদ্ধি অর্থ প্রধান। আর সমৃদ্ধি হল ‘সু’ এই পূর্বপদের অর্থ। তাই পূর্বপদার্থের প্রাধান্য থাকায় সুমদ্রং
অব্যয়ীভাব সমাস।
অব্যয়ীভাব সমাস বিধায়ক মুখ্য সূত্রগুলি নিম্নে
আলোচিত হল –
১. অব্যয়ং বিভক্তি-সমীপ-সমৃদ্ধি-ব্যৃদ্ধি-অর্থাভাব-অত্যয়-অসম্প্রতি-শব্দপ্রাদুর্ভাব-পশ্চাদ্-যথা-আনুপূর্ব্য-যৌগপদ্য-সাদৃশ্য-সম্পত্তি-সাকল্য-অন্তবচনেষু– বিভক্তি, সমীপ, সমৃদ্ধি, সমৃদ্ধি, ব্যৃদ্ধি (উন্নতির
অভাব), অভাব, অত্যয়, অসম্প্রতি, শব্দপ্রাদুর্ভাব, পশ্চাৎ, যথা, আনুপূর্ব্য,
যৌগপদ্য, সাদৃশ্য, সম্পত্তি, সাকল্য ও সমাপ্তি – এই ১৬ প্রকার অর্থে দ্যোতনাকারী
অব্যয়ের সঙ্গে সমর্থ পদের অব্যয়ীভাব সমাস হয়। উদাহরণগুলি হল –
ক. বিভক্তি অর্থে – হরৌ – অধিহরি
খ. সমীপ অর্থে – কৃষ্ণস্য সমীপম্ – উপকৃষ্ণম্
গ. সমৃদ্ধি অর্থে – মদ্রাণাং সমৃদ্ধিঃ –
সুমদ্রম্
ঘ. ব্যৃদ্ধি অর্থে – যবনানাং ব্যৃদ্ধিঃ –
দুর্যবনম্
ঙ. অভাব অর্থে – মক্ষিকাণাম্ অভাবঃ –
নির্মক্ষিকম্
চ. অত্যয় অর্থে – হিমস্য অত্যয়ঃ – অতিহিমম্
ছ. অসম্প্রতি অর্থ – নিদ্রা সম্প্রতি ন যুজ্যতে
– অতিনিদ্রম্
জ. শব্দপ্রাদুর্ভাব অর্থে – হরিশব্দস্য প্রকাশঃ
– ইতিহরি
ঝ. পশ্চাৎ অর্থে – বিষ্ণোঃ পশ্চাৎ – অনুবিষ্ণু
ঞ. যথা অর্থে – যথা শব্দের অর্থ চতুর্বিধ –
যোগ্যতা, বীপ্সা, পদার্থের অনতিবৃত্তি ও সাদৃশ্য।
১.
যোগ্যতা – রূপস্য যোগ্যম্ – অনুরূপম্
২.
বীপ্সা – অহনি অহনি – প্রত্যহম্
৩.
অনতিবৃত্তি – শক্তিম্ অনতিক্রম্য – যথাশক্তি
৪.
সাদৃশ্য – হরেঃ সাদৃশ্যম্ - সহরি
ট. আনুপূর্ব্য অর্থে – জ্যেষ্ঠস্য আনুপূর্ব্যেণ
– অনুজ্যেষ্ঠম্
ঠ. যৌগপদ্য অর্থে – চক্রেণ যুগপৎ - সচক্রম্
ড. – সাদৃশ্য অর্থে - সখ্যা সদৃশঃ – সসখি
ঢ. সম্পত্তি অর্থে – ক্ষত্রাণাং সম্পত্তিঃ – সক্ষত্রম্
ণ. সাকল্য অর্থে – তৃণম্ অপি অপরিত্যজ্য –
সতৃণম্
প. সমাপ্তি অর্থে – অগ্নিগ্রন্থপর্যন্তম্ –
সাগ্নি
২. নদীভিশ্চ– সংখ্যাবাচক শব্দের সঙ্গে নদীবাচক শব্দের অব্যয়ীভাব সমাস হয়। যথা – সপ্তানাং
গঙ্গানাং সমাহারঃ – সপ্তগঙ্গম্।
৩. সংখ্যা বংশ্যেন– সংখ্যাবাচক শব্দের সঙ্গে বংশ্যবাচক শব্দের অব্যয়ীভাব সমাস হয়। যথা – ত্রয়ঃ
মুনয়ঃ বংশ্যাঃ – ত্রিমুনি।
৪. সুপ্প্রতিনা মাত্রার্থে– মাত্রা অর্থাৎ স্বল্পতা বোঝালে প্রতি অব্যয়ের সাথে সুবন্ত
পদের অব্যয়ীভাব সমাস হয়। যথা – শাকস্য লেশঃ – শাকপ্রতি।
সমাসে কোনো পদের পূর্বে স্থাপনকে পূর্বনিপাত
বলে। অব্যয়ীভাবসমাসে পূর্বনিপাত বিধায়ক সূত্রটি হল – উপসর্জনং পূর্বম্। সূত্রের
অর্থ হল উপসর্জনের পূর্বনিপাত হয়। অব্যয়ীভাব সমাসে মুখ্যরূপে অব্যয়ই উপসর্জন হয়
তাই অব্যয়ই পূর্বে বসে। যথা – উপকৃষ্ণম্, দুর্ভিক্ষম্ ইত্যাদি।
সমস্তপদের অন্তে যে প্রত্যয় যোগ হয় তাকে
সমাসান্ত প্রত্যয় বলে। অব্যয়ীভাব সমাসে একটিই সমাসান্ত প্রত্যয় আছে। সেটি হল টচ্।
যথা – শরৎ-শব্দের সাথে টচ্ প্রত্যয় যোগ হয়ে উপশরদম্ সমস্তপদটি নিষ্পন্ন হয়।
অব্যয়ীভাব সমাসের বৈশিষ্ট্য –
ক. এই সমাসে অনব্যয় অব্যয়ে পরিণত হয়। যথা –
রূপস্য যোগ্যম্ – অনুরূপম্।
খ. অব্যয়ীভাবসমাসে সমস্তপদটি ক্লীবলিঙ্গ হয়।
যথা – কৃষ্ণস্য সমীপম্ – উপকৃষ্ণম্।
গ. এই সমাসে সমস্তপদের দীর্ঘস্বরটি হ্রস্ব হয়ে
যায়। যথা – গঙ্গায়াঃ সমীপম্ – উপগঙ্গম্।
ঘ. এই সমাসে প্রায় পূর্বপদটি অব্যয় হয় কিন্তু
কখনও কখনও উত্তরপদটিও অব্যয় হয়। যথা – শাকস্য লেশঃ – শাকপ্রতি।
No comments:
Post a Comment